Pages

Search This Blog

Sunday, August 12, 2012

ঈদ ঘিরে ব্যস্ত খোকসার বুটিক শিল্পীরা

ঈদ ঘিরে ব্যস্ত খোকসার বুটিক শিল্পীরা

সিরাজ প্রামাণিক খোকসা (কুষ্টিয়া)
ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, কুষ্টিয়ার হস্তশিল্প বুটিকস কারিগরদের ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। ঈদ ঘিরে এখন ব্যস্ত কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার ৫ সহস্রাধিক বুটিকস নারী কারিগর। কোনো মেশিনে নয়, ঘরের মেঝেতে কাঠের পাটাতনে নিজেদের উদ্ভাবিত কৌশলে বিভিন্ন রঙের শাড়িকে চারকোণায় বেঁধে বাহারি রং-বেরঙের পাথর বসিয়ে তৈরি করছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নকশা। কুমারখালী সাদিয়া বুটিক হাউসের কারিগর রিনা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছর এখনও তেমন কাজ পাওয়া যায়নি। আধুনিক মেশিনের তৈরি ভারতীয় লেইস বাজারে আসার কারণে পাথরের তৈরি বুটিকের চাহিদা তুলনামূলক কমে গেছে। তারপরও শৌখিন রমণীরা তাদের পছন্দসই শাড়ি বা বোরকা পছন্দ করেন। আশা করছি এখনও প্রয়োজনীয় অর্ডার পাব। তিনি জানান, এখানে মেশিনে কোনো কাজ করা হয় না। গ্রাহকরা তাদের পছন্দমত শাড়ি বা বোরকার কাপড় এনে দেন। আমরা শুধু ক্যাটালগ দেখে বিভিন্ন ডিজাইনের নকশা ও পাথর বসিয়ে কাজ করি। নকশার কাজে ওয়েট লেইস, মাখন, লেদার জর্জেট, পাথর, জরি, চুমকি, মাল্টি পুঁতি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। কাপড় ও কাজের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন ছফুরা সিল্ক এক নাম্বার কাপড়ের শাড়ি সর্বনিম্ন ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকা আবার ডিজাইন ভেদে ১২০০০ টাকাও এক-একটি শাড়ির দাম পড়ে। ১৫ বছর ধরে পাথরের ওপর বুটিকের কাজ করা শিল্পী রুমকি জানান, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ৬ মাস আগে থেকে কাজ শুরু করা হয়। গ্রাহকরা নিজেরা এসে কাপড় দিয়ে অর্ডার দিয়ে যান। বুটিকস পল্লীর সাদিয়া ফ্যাশন, রুমী ফ্যাশন, রিন্তু ফ্যাশনের এ কাজে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। শুধু খোকসা-কুমারখালীতে ব্যক্তি প্রচেষ্টায় সাদিয়া, সোনালী, রানু, নদিয়া ক্রাফট, কুষ্টিয়া ও কুমারখালী হস্তশিল্প নামে শতাধিক হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের মানুষ একসময় হস্তশিল্প বলতে বুঝত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা মেশিন ও হাতে বিভিন্ন ধরনের নকশা করা শাড়ি ও থ্রি-পিস। কিন্তু এখন শাড়ি ও থ্রি-পিসে বাহারি নকশায় কাজ হচ্ছে কুষ্টিয়াতেই। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নারীরা জোর দাবি করে বলেন, তাদের কারখানায় কাজ করা শাড়ি ভারত থেকে আমদানি করা শাড়ির চেয়ে অধিক মানসম্পন্ন। এখানকার বুটিকস শিল্পীরা জানান, তারা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শেখা পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। একটি শাড়ি বা বোরকায় পাথরের কাজ করতে ৩-৪ জন কারিগরের এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। কুমারখালীতে রয়েছে সাদিয়া ও সোনালী হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান। এই দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখন ৫ শতাধিক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের ৩ মাস পর্যন্ত পান সাড়ে ১৫শ’ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা। প্রশিক্ষণ শেষে একটি শাড়ির নকশা অনুযায়ী শাড়িপ্রতি ২০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।
সোনালী হস্তশিল্পের পরিচালক রিনা জানান, একজন দক্ষ প্রশিক্ষিত নারী মাসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটের আল হেলাল ফ্যাশন এখানকার হস্তশিল্পের নকশা করা শাড়ি বাজারজাত করছে।